হামারীর ধাক্কা ও চীনের সঙ্গে উত্তেজনার প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চললেও বাণিজ্য উপাত্তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে শীর্ষ দুই অর্থনীতি একে অন্যের ওপর কতটা নির্ভরশীল। দীর্ঘমেয়াদে চীনের বিকল্প উৎস ঠিক করতে পারলেও স্বল্পমেয়াদে শীর্ষ দুই অর্থনীতির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা কমছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেন। জাতীয় নিরাপত্তার ধোঁয়া তুলে একে অন্যের পণ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করে তারা। তবে তিক্ততা চূড়ায় পৌঁছার পর উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে। আগামী মাসেই দুই শীর্ষ অর্থনীতির বাণিজ্য উপাত্ত বিস্তারিত প্রকাশিত হবে। আশা করে হচ্ছে, উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঊর্ধ্বমুখী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তেজনার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য খাতে। পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের (পিআইআইই) সিনিয়র ফেলো ম্যারি লাভলি জানান, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আগে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ আমদানি করত তা কমেছে। আমদানির বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সচেতন চীন বিমুখতা দেখা যায়।
২০১৭ সালে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ছিল ৫০ হাজার ৬০ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে তা ৪৫ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়ায়। অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৫ হাজার কোটি ডলার কমে। দ্বিপক্ষীয় টানাপড়েনই যে কেবল বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে এমন নয়। কয়েক বছর ধরে চলা করোনা মহামারীও এতে মারাত্মক প্রভাব রেখেছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষক রয়ান সুইট জানান, শূন্য-কভিড নীতির প্রভাবে গত নভেম্বরে চীনের রফতানিতে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মনোযোগও এতে ভূমিকা রেখেছে। মহামারীর মধ্যে আমেরিকানরা বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেছে। কিন্তু কভিডভীতি প্রশমনের পর পণ্য ক্রয় কমিয়ে বিভিন্ন সেবা গ্রহণে ঝুঁকছে তারা। এতে পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতে সুবাতাস বইছে।
নভেম্বর নাগাদ প্রাপ্ত উপাত্তে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। চীন থেকে আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ নয় বরং বিভিন্ন খাতে আমদানি বাড়বে বলে মনে করেন সুইট। মহামারীর মধ্যে সরবরাহ চেইন সংকটে ধুঁকেছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে স্বনির্ভরতায় জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মার্কিন অংশীদারত্ব বাড়ছে। এছাড়া ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। নভেম্বর নাগাদ প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা গেছে, ২০২২ সালে ইইউ থেকে ৫০ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার আমদানি করেছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি, যা চীন থেকে ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার আমদানি থেকে বেশি।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/113059084.jpg[/IMG]