[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1591572239.jpg[/IMG]
নতুন প্রযুক্তির পেছনে কোনো সরকারের অব্যাহত বিনিয়োগের ফলাফল কী হতে পারে, বেইজিংয়ের রাস্তায় চোখ রাখলে তা সহজেই অনুমেয়। ৫ বছর আগে শহরটির কর্তৃপক্ষ ফসিল ফুয়েল চালিত গাড়ি নিষিদ্ধ করেছিল। আর এখন শরহটি চলছে হাজার হাজার ব্যাটারি চালিত গাড়ির সাহায্যে।
এসব বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) চালকদের চার্জিং নিয়ে বাড়তি কোনো মাথা ঘামাতে হয় না।
বেইজিংসহ চীনের বহু শহরে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো কোনো চার্জিং স্টেশনে চার্জ নেওয়ার পরিবর্তে ব্যাটারি পরিবর্তন স্টেশনে গিয়ে চার্জহীন ব্যাটারির বদলে সম্পূর্ণ চার্জ করা ব্যাটারি পরিবর্তন করে নেয়। এতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। অন্যান্য দেশের মতো চীনের অনেক বৈদ্যুতিক গাড়িকেই চার্জিং স্টেশনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না। অনেকদিন ধরেই চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই গাড়ি দিন দিন আরও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
গত বছরের জুলাইতে চায়না প্যাসেঞ্জার কার অ্যাসোসিয়েশন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল দেশটিতে ২০২২ সালে নতুন ৫৫ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হবে। আসলে বিক্রি হয়েছে ৫৬ লাখেরও বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে শুধু টেসলাই বিক্রি হয়েছে ৮৩ হাজার ১৩৫টি গাড়ি, যা ছিল চীনে তাদের এক মাসে সর্বোচ্চ বিক্রি। চীনে নতুন কেনা গাড়িগুলোর চারভাগের একভাগই হয় পুরোপুরি ইলেকট্রিক, নতুবা প্লাগ-ইন হাইব্রিড। তার মানে, ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রির দিক থেকে চীন ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। বর্তমানে বিশ্বে যত ইলেকট্রিক গাড়ি বিক্রি হয়, তার অর্ধেক হয় চীনে। এসবই সম্ভব হয়েছে এ খাতে চীন সরকারের উদ্যোগ এবং অব্যাহত ভর্তুকির কারণে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চীন সরকার ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিচ্ছে। এই ভর্তুকির পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে এবং চলতি বছর সব ভর্তুকি তুলে নেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো চীনে ইলেকট্রিক গাড়ি কেনাটা অনেক সাশ্রয়ী এবং এগুলোর বিক্রয় পদ্ধতি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, গ্রাহকের পকেটে তেমন চাপ পড়ে না।

চীনে ফসিল ফুয়েল চালিত গাড়ির ক্রেতাদেরকে গাড়ির মূল্যের পাশাপাশি লাইসেন্স প্লেটের জন্যও উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এটা খুবই ব্যয়বহুল। সাংহাই শহরে একটি ফসিল ফুয়েল চালিত গাড়ির লাইসেন্স প্লেটের জন্য অন্তত ১ লাখ ইউয়ান বা ১৪ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হয়।

অথচ, কেউ যদি ইলেকট্রিক গাড়ি কেনে, তাহলে এসব বাড়তি খরচের বদলে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারে। যদিও শহর অনুযায়ী এসব সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন। যেমন- লিউঝু শহরের কর্তৃপক্ষ ইলেকট্রিক গাড়িগুলোকে বাসের লেন ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়েছে। শহরটিতে ইভির জন্য ফ্রি কার পার্কিংয়েরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ইলেকট্রিক গাড়িকে আরও জনপ্রিয় করতে তুলনামূলক অনেক সস্তা গাড়িও পাওয়া যায় চীনের বাজারে। যেমন- ইলেকট্রিক গাড়ি বেশি দামী, এই ধারণাটাই ভেঙ্গে দিয়েছে উয়ুলিং হং গুয়াং মিনি ইভি। গাড়িটির অনেকগুলো ভার্সন আছে এবং এগুলোর দাম মাত্র ৪ হাজার ২০০ পাউন্ড থেকে শুরু। শহরে এবং প্রথমবার গাড়ি কিনে চাইছেন, এমন অনেক ক্রেতাদের কাছে গাড়িটির আবেদন রয়েছে।

কনসাল্টিং এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টর্মক্রো ক্যাপিটালের পরিচালক জন হাইকাওই বলেন, 'এই গাড়িগুলো এশিয়ার বাজারেও বিশাল পরিমাণে বিক্রি হতে পারে।'

বর্তমানে হং গুয়াং মিনি হচ্ছে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইলেকট্রিক গাড়ি। তবে দামি গাড়িও দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। যেমন- টেসলার মডেল ওয়াইয়ের দাম ৪৯ হাজার ডলার এবং এক্সপাং পি৭ এর দাম ৩০ হাজার ডলারের বেশি। এই দুটি গাড়ি দেশটিতে সর্বোচ্চ বিক্রিত ১০টি ইলেকট্রিক গাড়ির তালিকায় আছে।

চীনের ইলেকট্রিক গাড়ির বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ অনেক কোম্পানিই এই ব্যবসায় যুক্ত হতে চায়। এমনকি জুনিয়াও নামের একটি এয়ারলাইন কোম্পানিও ইভি বানাতে চায়।

গার্টনার কনসাল্টিং ফার্মের বিশ্লেষক পেড্রো পাচেকো বলেন, 'নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এসব নির্মাতাদের জন্য চীন খুব ভালো একটি বাজার। দেশটিতে ইভির যে দাম, তা খুবই আকর্ষণীয়।'

ইভির বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ায় এখন আরও আকর্ষণীয় ও বিলাসবহুল গাড়িও বাজারে আসছে।