অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক বাধা, বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরকরণ অন্যতম। এ প্রবণতা আগামী বছরগুলোয় বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1247014821.jpg[/IMG]
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওয়াইমিংয়ের জ্যাকসন হোলে ফেডারেল রিজার্ভের কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনের আর্থিক গবেষণায় এ আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়। কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতি বৃহত্তর একীকরণের দিকে এগোচ্ছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে পণ্য লেনদেন হচ্ছে। বিদেশে সস্তা মজুরির কারণে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক কম থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সেসব পণ্য ক্রেতারা কম দামে কিনতে পারেন এবং এতে মূল্যস্ফীতি প্রবণতাও কম থাকে। তবে কভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে বাইরের উৎপাদিত পণ্যের প্রবণতাটি বিপরীত হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছে। বহুজাতিক করপোরেশনগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল চীন থেকে প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্রমুখী হচ্ছে। বিশেষত সেমিকন্ডাক্টর, অটো ও ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর উৎপাদন কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের ব্যাপক ভর্তুকির কারণে উৎপাদকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে।
সরকারি ঋণ ও কাঁচামালের চাহিদা বাড়ার ফলে অস্থায়ীভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বৃহৎ আকারের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বের জনসংখ্যার বড় অংশজুড়েই এখন বয়স্ক মানুষ। তাদের কাজ করার সক্ষমতা কম। এ প্রবণতাগুলোর ফলে সরবরাহ সংকটসহ পণ্য ও শ্রমের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই দশা ঘটেছিল মহামারী-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকালে।
ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন পরিস্থিতি মহামারীর আগে আমরা যেভাবে দেখেছিলাম, তার চেয়েও তুলনামূলক বড় মূল্যের ধাক্কা তৈরি করছে। যদি আমরা বড় বিনিয়োগ ও বড় ধরনের সরবরাহ সংকটের মুখোমুখি হই, সম্ভবত বাজারে জিনিসপত্রের দাম ব্যাপক বেড়ে যাবে। বিশেষত পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির জন্য দরকারি ধাতু ও খনিজ উপাদানের দাম অনেক বাড়বে।’
তিনি আরো বলেন, ‘*এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসিবি, ফেডারেলে রিজার্ভ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা তাদের চেষ্টা মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে লড়াই করছে। ২০২১ সালের প্রথম দিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর এ চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছিল এবং সামান্যই কমেছে।’
সমস্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও মার্কিন আমদানি ২০২২ সালে সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অর্থনীতিবিদ লরা আলফারো কনফারেন্সে তার গবেষণা বক্তৃতায় সতর্ক করে বলেন, ‘এ পরিবর্তনগুলোও নিম্নমুখিতা নিয়ে আসে। গত পাঁচ বছরে ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানি খরচ প্রায় ১০ শতাংশ ও মেক্সিকো থেকে প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাড়লেও চীননির্ভরতা কমিয়েছে দেশটি। কয়েক দশক ধরে প্রবৃদ্ধিতে থাকার পর ২০১৭-২০২২ সাল পর্যন্ত চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৫ শতাংশ কমেছে বলে গবেষণাপত্রে তুলে ধরেছেন আলফারো।