বিশ্বের প্রধান কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত ও পূর্বাভাসের সুফল দেখা যাচ্ছে না এশিয়ার বাজারে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেব চীনের অর্থনৈতিক উদ্বেগকে সামনে এনেছেন বিশ্লেষকরা। দেশটির মুদ্রায় বিনিময় হারের পতন ও শেয়ারবাজারের চিত্র থেকে তারা এ সিদ্ধান্তে এসেছেন। পাশাপাশি এশিয়ার আরেক বড় অর্থনীতি জাপানও উদ্বেগে ভূমিকা রেখেছে। চীনের মুদ্রা ইউয়ানের বিনিময় হারে দ্রুত নিম্নমুখিতা ও শেয়ারবাজারে পতনের প্রভাব পড়েছে পুরো এশিয়ার বাজারে। অন্যদিকে আর্থিক পরিস্থিতির বর্তমান চিত্রের কারণে দেশটিতে শিগগিরই সুদহার কমার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে দেশটির বিনিয়োগ পরিস্থিতির সম্ভাব্য চিত্র নিয়েও খুব একটা আশাবাদী নন বাজার পর্যবেক্ষকরা। এদিকে জাপানের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতিও নতুন সতর্কবার্তা দিচ্ছে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট ের। গত সপ্তাহে জাপানি কর্মকর্তারা ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও ইয়েনের বিনিময় হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে। ওই সময়ে ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) দীর্ঘ ১৭ বছর পর সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/958549431.jpg[/IMG]
ইউয়ানের বিনিময় হার চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে পৌঁছেছিল গতকাল। বিনিয়োগকারীদের জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাব গুরুত্বপূর্ণ ৭ দশমিক ২ ডলার স্তরকে লঙ্ঘন করে দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৭ দশমিক ২২৪৩-এ পৌঁছে, যা চীনের প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে ডলার বিক্রি ও বাজার থেকে ইউয়ান তুলে নিতে বাধ্য করে।
ইউয়ানের পতন মন্থর করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ততটা সুফল দেখা যায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে আরো স্থিতিশীল দেখানোর মতো উদ্দীপনা তৈরি করতে হবে। ইউয়ানের নিজস্ব দুর্বলতার পাশাপাশি দুর্বল ইয়েনও চীনের মুদ্রার ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ইউয়ান কেনার উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগকে প্রশমিত করতে পারেনি।
গতকাল চীনের মূল ভূখণ্ডের সিএসআই৩০০ সূচক ও সাংহাই কম্পোজিট সূচক পড়েছে ১ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২ শতাংশ কমেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান মে ব্যাংকের ইক্যুইটি সেলস ট্রেডিংয়ের প্রধান ওং কোক হুং জানান, এদিন বাজার খুবই নাজুক অবস্থানে ছিল। এর পেছনে চীনা কোম্পানিগুলোর দুর্বল আয়, দেশটির আবাসন খাতের ক্রমাগত সমস্যা ও অন্যান্য উদ্বেগ ভূমিকা রেখেছে। ইয়েনের পতন নিয়েও সতর্ক অবস্থানে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। জাপানে প্রতি ডলারের বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১ দশমিক ৮৬ ইয়েনে। গত সপ্তাহে বিওজে সুদহার বাড়ালেও যুক্তরাষ্ট্রের সুদহারের সঙ্গে ব্যবধান কমাতে ব্যর্থ হয়েছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ইয়েনকে চাপের মধ্যে রাখছে।
গতকালের তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে জাপানের মূল মূল্যস্ফীতি বেড়েছে হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক ধীর হয়ে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কত তাড়াতাড়ি আবার সুদহার বাড়াবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বাজারে।
এ বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিশ্লেষকরা বলছেন, বিওজের সুদহার বাড়ানোর দিনে ইয়েনের দুর্বলতা এটাই নির্দেশ করছে যে ১০ বেসিস পয়েন্ট সুদহার বৃদ্ধি মূলধন প্রবাহ বাড়াতে ও মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে অপর্যাপ্ত। ডলারের বিপরীতে ইয়েনকে শক্তিশালী করতে দুই দেশের সুদহারের ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে, যা অংশত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নীতির ওপরও নির্ভর করে।
এদিকে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) ২৫ বেসিস পয়েন্টে সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। একই দিন ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) জুনে সুদহার কমানোর পূর্বাভাস দেয়। এ কারণে এশিয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ সেদিকে ধাবিত হয়েছে। এর আগে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরে তিন দফায় সুদহার কমানোর পূর্বাভাস দেয়। ওই ঘোষণায় অনিশ্চয়তা থাকলেও ডলারের বাজারে ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।