[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1645068346.jpg[/IMG]
নতুন বিনিয়োগ, তহবিলের স্থানান্তর, অধিগ্রহণ ও একীভূতকরণের ওপর বাজারের সবলতা অনেকটাই নির্ভর করে। এসব খাতে অন্যতম চালক হিসেবে কাজ করে প্রাইভেট ইক্যুইটি (পিই) ফান্ডগুলোর লেনদেন। বছরের শুরুতেই এ ধরনের লেনদেন ও চুক্তিতে পিছিয়ে পড়েছে এশিয়ার বাজার, যা প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমুখী। অথচ একই সময়ে বৈশ্বিক পিই লেনদেন আগের বছরের তুলনায় ডাবল ডিজিটে বেড়েছে। চলতি প্রান্তিকে পিই কেন্দ্রিক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ (এমঅ্যান্ডএ) চুক্তির খরার পেছনে এ অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি চীনে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের স্থবিরতাকে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশটির অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সামগ্রিক ব্যবসা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) দেয়া তথ্যানুযায়ী, এশিয়ায় জানুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত পিই ভিত্তিক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম। একই সঙ্গে ২০১৫ সালের পর থেকে প্রথম প্রান্তিকে সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড করেছে। অন্যদিকে একই সময়ে বৈশ্বিক পিই সমর্থিত লেনদেন ২১ শতাংশ বেড়ে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার হয়েছে।

এশিয়ার পিই ফার্মগুলোয় রেকর্ড পরিমাণ নগদ অর্থ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে বলে সম্প্রতি আঞ্চলিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পরামর্শক সংস্থা বেইন অ্যান্ড কোম্পানি। সেখানে বলা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতা, উচ্চ সুদহার, অস্থির বাজার ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তহবিল বিনিয়োগ ও প্রত্যাহারকে বাধাগ্রস্ত করেছে। একই সঙ্গে নতুন তহবিল সংগ্রহে ব্যবস্থাপকদের ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করেছে।

টোকিও-ভিত্তিক বেইন অ্যান্ড কোম্পানির সহপ্রধান সেবাস্তিয়ান ল্যামি বলেন, ‘*তহবিল প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াকে সহজ হতে হবে। কারণ অর্থ অব্যবহৃত থাকলে তা শুধু আয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে না, এটি পুনরায় বিনিয়োগের ক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করে।’

পিই ফান্ডের তথ্য প্রদানকারী সংস্থা প্রিকিনের মতে, এশিয়ায় আইপিও, সেকেন্ডারি বাইআউটের মাধ্যমে পিই তহবিলের স্থানান্তর প্রথম প্রান্তিকে ৫১ শতাংশ কমে ৪৯০ কোটি ডলার হয়েছে, যা ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সর্বনিম্ন।

এ সময় আঞ্চলিক পিই সমর্থিত একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ লেনদেন পতনে মূল ভূমিকা রেখেছে চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে এ ধরনের চুক্তি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এলএসইজির তথ্যানুযায়ী, অর্থনৈতিক মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের ওপর নেতিবাচক চাপ তৈরি করেছে। হংকং-ভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিডিএ পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পল ডিগিয়াকোমো বলেছেন, বিশ্বব্যাপী পিই সংস্থার একটি বড় অংশ চীনে বিনিয়োগের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।

প্রিকিনের তথ্যানুযায়ী, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম প্রান্তিকে ২৮টি তহবিলের মাধ্যমে মাত্র ১ হাজার ২১০ কোটি ডলারের মূলধন সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা ২০২৪ সালের জানুয়ারি-মার্চের পর থেকে সর্বনিম্ন প্রান্তিকের উদাহরণ। অথচ গত পাঁচ বছরে প্রতি প্রান্তিকে গড়ে ৩১৩টি তহবিল গঠিত হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে এশিয়ায় ব্যয় হয়নি এমন পিই মূলধনের পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি অধিগ্রহণ বা একীভূতকরণে যেতে পারেনি এমন অবিক্রীত সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, উভয়ই রেকর্ড সর্বোচ্চ।

তবে সামনের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন ব্যাংকার ও আইনজীবীরা। হংকং-ভিত্তিক আইনি সংস্থা মরিসন ফোয়েরস্টারের গ্লোবাল কো-চেয়ার মার্সিয়া এলিস বলেন, ‘*বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিডল-মার্কেটে লেনদেন ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যের তহবিলগুলোও চীনে সম্পদ বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে।’