প্রত্যাশা অনুসারে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) বিক্রি না বাড়ায় সাম্প্রতিক বছরে বেশির ভাগ কোম্পানি উৎপাদন পরিকল্পনা পরিমার্জনে বাধ্য হয়েছে। অনেকে শুধু ইভি উৎপাদনের পরিবর্তে হাইব্রিডসহ অন্য বিকল্পের দিকে ঝুঁকেছে। সব মিলিয়ে এ খাতের প্রবৃদ্ধি আগামী বছর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্ববাজারে যাত্রীবাহী ইভির বিক্রি ৩০ শতাংশ বা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাড়বে। নিউইয়র্কভিত্তিক রেটিং সংস্থার মোবিলিটি ইউনিট জানিয়েছে, ২০২৫ সালে জনপ্রিয় মডেলের ইভির বিক্রি ১ কোটি ৫১ লাখ ইউনিটে পৌঁছাবে, যা আগের বছরের অনুমানিক ১ কোটি ১৬ লাখ ইউনিট বিক্রির তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে যাত্রীবাহী ছোট গাড়ি ও পিকআপ বিক্রির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ দখল করে থাকবে হাল প্রযুক্তির বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি। ২০২৪ সালে এ হিস্যা ছিল ১৩ দশমিক ২ শতাংশ।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1495541321.jpg[/IMG]
ইভির চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা এবং কোম্পানিগুলোর উৎপাদন হ্রাস সত্ত্বেও বিক্রি বৃদ্ধির এ পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। সংস্থাটির বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি প্রণোদনা ও ভর্তুকি নীতির পুনর্বিবেচনা এবং অবকাঠামো চ্যালেঞ্জ এ পরিস্থিতির পেছনে ভূমিকা রাখছে।
গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও সবচেয়ে বড় ইভি বাজার চীন বিক্রির ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ দখলে রাখবে। এরপর যথাক্রমে ২০ দশমিক ৪ ও ১১ দশমিক ২ শতাংশ নিয়ে বাজার হিস্যা থাকবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ ভারতের দখলে থাকবে সাড়ে ৭ শতাংশ বাজার, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চার্জিং অবকাঠামো, গ্রিড পাওয়ার, ব্যাটারি সরবরাহ চেইন, উপকরণ সংগ্রহের প্রবণতা, বাণিজ্যে শুল্ক বাধা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির হার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তরের সুবিধার্থে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, যার প্রভাব ২০২৫ সালে অব্যাহত থাকতে পারে।
গবেষণায় দেয়া পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫ সালে সব ধরনের গাড়ি বিক্রি ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮ কোটি ৯৬ লাখ ইউনিটে পৌঁছবে। অন্যদিকে প্রাথমিক হিসাব অনুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক যানবাহনের বিক্রি ৮ কোটি ৮২ লাখ ইউনিটে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে, যা ২০২৩ থেকে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ সামগ্রিক গাড়ি খাতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।
এসঅ্যান্ডপি পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক বাধার উল্লেখ করেছে। বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত নীতি যানবাহনের চাহিদার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক বাড়ানোর হুমকি ও সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ। এছাড়া চীনা ইভির ওপর এরই মধ্যে শুল্ক বাধা প্রয়োগ শুরু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, পূর্বাভাসে তারা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরবরাহ চেইনের উন্নতি, শুল্কের প্রভাব, উচ্চ সুদহার, ভোক্তাদের সামর্থ্য, আস্থার টানাপড়েন, নতুন গাড়ির উচ্চ মূল্য, জ্বালানি মূল্য এবং সরবরাহ উদ্বেগ, গাড়ি ঋণে ঝুঁকি ও বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মোবিলিটির নির্বাহী পরিচালক কলিন কাউচম্যানের মতে, ২০২৫ সাল অটো শিল্পের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে। আঞ্চলিক বিষয়গুলো সামগ্রিক চাহিদার সম্ভাবনা সীমিত করতে পারে। যেমন নতুন মার্কিন প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই অনিশ্চয়তা যোগ করছে। প্রধান উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে প্রণোদনা ও ভর্তুকি, শিল্প নীতি, শুল্ক এবং প্রস্তুতকারকের লক্ষ্য নির্ধারণে বিভিন্ন দেশের সরকারের নীতি সহায়তার পুনর্বিবেচনা।