[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1715264208.jpg[/IMG]
এখনো দুই অংকের ঘরে দেশের মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকতে দেখা গেছে গত মাসেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে দেশে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১২ দশমিক ৯২ আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতির হার কমে চলেছে। আড়াই বছর আগে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা শ্রীলংকা এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির হারকে ঋণাত্মক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ দেশটি এখন মূল্য সংকোচনের ধারায় রয়েছে। সর্বশেষ গত মাসেও দেশটিতে মূল্য সংকোচন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকার তথ্য অনুযায়ী, এ নিয়ে গত সেপ্টেম্বর থেকে টানা চার মাস মূল্য সংকোচনের দেখা পেল দেশটি। সে অনুযায়ী দেশটিতে এখন নিত্যপণ্যের মূল্যহ্রাস অব্যাহত রয়েছে।
এমনকি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে বছর পার করা পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে দেশটির সরকার। দেশটিতে গত মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল আগের বছরের একই সময়ের বিপরীতে ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়ই এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে প্রায় তিন বছর ধরে। ২০২৪ পঞ্জিকাবর্ষে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশে। আর অর্থবছরের হিসাবে গত দুই অর্থবছরজুড়েই (২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪) দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের ওপরে।
গত নভেম্বরে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৮০ ও ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীতের সবজি বাজারে আসায় গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের নিচে না নামলেও কিছুটা কমেছে। মূলত দেরিতে বাজারে আসার কারণেই মূল্যস্ফীতির হার কমানোয় এসব পণ্য খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি বলে অভিমত তাদের।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বন্যার প্রভাবে এবার মৌসুমি সবজি ও আমনের উৎপাদন কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তাই ডিসেম্বরের শেষদিকে বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। জানুয়ারিতে তা হয়তো আরো কিছুটা কমবে। তবে বেশি কমবে না। কারণ সবজির দাম কমলেও চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। আর নিম্নবিত্ত মানুষের চালের ওপর নির্ভরতা বেশি। তাই এ মাসেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি খুব একটা কমবে না।’
বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে বলে দাবি করে বিবিএস। এরপর সেপ্টেম্বরে আরো কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দেখানো হয়। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে এ হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়। অক্টোবরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। নভেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে গত দুই অর্থবছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থপ্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করেছিল, সেটি খুব বেশি কাজে আসেনি।
মূলত সরবরাহ ঘাটতি ও বাজার অব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, চাহিদা নিয়ন্ত্রণ বা শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে এ মূল্যস্ফীতি কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য উৎপাদন ও আমদানি বৃদ্ধিতে বাড়তি মনোযোগ দেয়ার মাধ্যমে জিনিসপত্রের দাম কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। অন্যথায় সামনের দিনগুলোয় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে।
বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসেও খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার শহরাঞ্চলে ছিল তুলনামূলক বেশি। এ সময় দেশের শহর এলাকায় ছিল ১৩ দশমিক ৫৬ আর গ্রামাঞ্চলে ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। নভেম্বরে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৪ দশমিক ৬৩ আর গ্রামাঞ্চলে ছিল ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ সময় শহর ও গ্রাম উভয় এলাকায়ই সাধারণ ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারও আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
আগামীতে দ্রব্যমূল্য আরো কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সরকার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। তবে বাজারে মুদ্রানীতির প্রভাব পড়তে সময় লাগে। বাজারে শীতকালীন সবজি এসেছে। আবার বিভিন্ন নিত্যপণ্যের শুল্কহার কমানো হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের দাম কমে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। আগামীতে পণ্যমূল্য আরো কমবে।’