[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/748643495.jpg[/IMG]
যুক্তরাজ্যে সরকারি ঋণে নতুন চাপ যোগ হয়েছে। সম্প্রতি ১০ ও ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড রেকর্ড সর্বোচ্চ পৌঁছেছে। সরকারি খরচ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় নয় মাসের মধ্যে ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যায় পাউন্ডের বিনিময় হার। এ পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এফটি। এর মধ্যে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড ২০০৮ সালের স্তরে পৌঁছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওই বছর সবচেয়ে বড় আর্থিক বিপর্যয়ে পড়ে বিশ্ব। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক ও হাউজিং খাত। এর প্রভাবে যুক্তরাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক খাতকে কোটি কোটি পাউন্ড সাহায্য দেয় সরকার। এছাড়া হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারায় এবং অর্থনীতি সংকুচিত হয়। সব মিলিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং ব্যাংক খাতকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ সরকার ব্যাপক ঋণগ্রহণ করে।
এসব কারণে ঋণের খরচ ২০০৮ সালের স্তরে পৌঁছায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে সরকারি ঋণে। ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে সরকারকে কর বাড়াতে অথবা ব্যয়ের পরিকল্পনা কাটছাঁট করতে হবে।
সরকার বাজেট পরিকল্পনা অনুসরণ করবে বলে এরই মধ্যে জানিয়েছে ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র। তার মতে, আর্থিক নিয়ম মেনে চলা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। এ বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না। পাবলিক ফাইন্যান্স পরিচালনার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে স্টারলিং বা পাউন্ডের মান কমে আসছে। ক্রমবর্ধমান বন্ড বিক্রি ক্ষমতাসীন লেবার সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি তাদের পরিকল্পিত বাজেট বাস্তবায়নে বাধা দিতে পারে।
গত বুধবার ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড গিল্টের ইল্ড দশমিক ১৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশে পৌঁছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ। ৩০ বছর মেয়াদি গিল্টের ইল্ড মঙ্গলবার ১৯৯৮ সালের পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে। বুধবার তা আরো বেড়ে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ স্পর্শ করে।
বিশ্বব্যাপী সরকারি ঋণ বড় অর্থনীতিগুলোর জন্য সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে এরই মধ্যে একাধিক ফোরাম থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে ঋণগ্রহণের খরচ অন্য বড় অর্থনীতির তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চ ঋণগ্রহণ এবং স্থবির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা। পরিস্থিতি তাদের আস্থায় আনা না গেলে অর্থনীতি আরো নেতিবাচক অবস্থায় পড়তে পারে। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করার জন্য বলেছে, সরকার তাদের আর্থিক নিয়মের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত বুধবার ডলারের সঙ্গে বিনিময় হারে এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন স্তরে ছিল স্টারলিং। ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে এদিন এক পাউন্ডে পাওয়া যাচ্ছিল ১ দশমিক ২৩৪ ডলার। এদিকে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় ব্যবসাকেন্দ্রিক এফটিএসই ২৫০ সূচক ২ শতাংশ কমে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে রাসেল ইনভেস্টমেন্টসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ অ্যান্ড্রু পিজ বলেন, ‘বন্ড বাজারের এমন পরিস্থিতি এখন বৈশ্বিক বিষয়। তবে স্থবির অর্থনীতি, স্থায়ী মূল্যস্ফীতি ও নেতিবাচক বাজেট পূর্বাভাস মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে।’
লেবার পার্টির প্রথম বাজেটে চ্যান্সেলর র*্যাচেল রিভস ৪ হাজার কোটি পাউন্ড কর বৃদ্ধির পরও যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৯৯০ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ রেখেছেন। মূলত পাবলিক ফাইন্যান্সে ভারসাম্য আনতে এ কর বৃদ্ধি পরিকল্পনা।
কিন্তু সরকারি ঋণের ইল্ড বৃদ্ধির ফলে তার এ বাজেট সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে। বন্ডের ইল্ডের স্তর বাজেটের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কারণ এটি সরকারের সুদ খরচ বাড়ায়, যা বছরে ১০ হাজার কোটি পাউন্ডের বেশি।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের রুথ গ্রেগরির মতে, বুধবার ইল্ডের বৃদ্ধি চ্যান্সেলরের বর্তমান বাজেট সুরক্ষাকে কার্যত মুছে দিয়েছে। যদি এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে, তাহলে চ্যান্সেলরকে বাজেট নীতিমালা বজায় রাখতে সংশোধনী ঘোষণা করতে হতে পারে।
আগামী ২৬ মার্চ অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটি (ওবিআর) নতুন আর্থিক পূর্বাভাস ঘোষণা করবে, যা বন্ড ইল্ডের গতিপ্রকৃতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
রয়্যাল লন্ডন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র ফান্ড ম্যানেজার বেন নিকল বলেন, ‘বাজেট নিয়মের বিপরীতে চ্যান্সেলরের কোনো সুরক্ষা আর অবশিষ্ট নেই। বাজার প্রশ্ন তুলছে যে এখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কর বৃদ্ধি বা সরকারি দপ্তরের ব্যয়ে কাটছাঁট শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে, ঋণগ্রহণ এরই মধ্যে বেশি হওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি কর রাজস্বের ওপর চাপ ফেলবে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্বব্যাপী সরকারি ঋণের খরচ বেড়েছে। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডা, মেক্সিকো ও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে। এদিন দুপুরে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি, যা গত এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।