[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1635565654.jpg[/IMG]
চার বছর মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০২৪ সালে বেড়েছে জিডিপির বিপরীতে বৈশ্বিক ঋণের অনুপাত। এ সময় বৈশ্বিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ৩১৮ ট্রিলিয়ন বা ৩১৮ লাখ কোটি ডলার। এ সম্প্রসারণের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশগুলোর জিডিপির ধীর প্রবৃদ্ধি। ঋণের এ রেকর্ড বৃদ্ধি বন্ডে বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য মুনাফার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স (আইআইএফ)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্ িক সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ঋণ ৭ লাখ কোটি ডলার বাড়লেও আগের বছরের বৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ১৫ লাখ কোটি ঋণ বাড়ে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর প্রত্যাশা ঋণের বাজার স্ফীতিতে প্রভাব ফেলে।
অবশ্য ২০২৩ সালের তুলনায় বৈশ্বিক ঋণ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য কম হলেও একে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আকারেই বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আইআইএফ সতর্ক করে বলছে, চলতি বছর সরকারগুলো যদি অতিরিক্ত বাজেট ঘাটতি বজায় রাখে, তবে বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, যা সরকারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশে রাজনৈতিক বিভাজন তীব্র, সেখানে এ ঝুঁকি আরো বেশি। অর্থাৎ, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যদি কোনো সরকার ঋণ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয় বা বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক নীতি বাজারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস পদত্যাগে বাধ্য হন। একইভাবে ফ্রান্সেও বাজেট ঘাটতির চাপে গত বছর প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার ক্ষমতা ছাড়েন।

ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার নির্দেশক হিসেবে পরিচিত ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ৩২৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এ সময় সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ লাখ কোটি ডলার, যা ধীর মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির চাপে অর্থনীতিতে আরো জটিলতা তৈরি করেছে।

আইআইএফ প্রত্যাশা করছে, চলতি বছরে বৈশ্বিক ঋণ বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার ধীর হবে। কেননা বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সরকার ও বিনিয়োগকারীরা কম ঝুঁকি নিতে চাইবে। একই সঙ্গে উচ্চ সুদহার বজায় থাকায় ২০২৫ সালে ঋণের বৃদ্ধি ধীর হতে পারে।

তবে সংস্থাটি সতর্ক করেছে যে ঋণের উচ্চ খরচ ও অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তার মধ্যেও চলতি বছর সরকারি ঋণ আরো ৫ লাখ কোটি ডলার বাড়তে পারে। কারণ ইউরোপে সামরিক ব্যয় এবং বিভিন্ন খাতে আর্থিক প্রণোদনার চাহিদা বাড়ছে।

আইআইএফের টেকসই উন্নয়ন গবেষণা বিভাগের পরিচালক এম্রে টিফটিক বলেন, ‘যেসব দেশে রাজনৈতিক বিভাজন বেশি, সেখানে জাতীয় ঋণের বাজারে আরো বেশি অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।’

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ঋণ সম্প্রসারণে সবচেয়ে বেশি অবদান উদীয়মান বাজারের। এর নেতৃত্বে রয়েছে চীন, ভারত, সৌদি আরব ও তুরস্ক। বৈশ্বিক ঋণ বৃদ্ধিতে এ বাজারের অবদান ৬৫ শতাংশ। আইআইএফ সতর্ক করে বলেছে, চলতি বছরে উদীয়মান অর্থনীতিকে রেকর্ড ৮ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ঋণই বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের পরিমাণ এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি উদীয়মান বাজারগুলোর জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বৈশ্বিক ঋণের ক্ষেত্রেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নীতি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রতিবেদন অনুসারে, বর্ধিত বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ইউএসএআইডিসহ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যা উদীয়মান বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ পরিশোধ ও নতুন ঋণ গ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের সংকটে অভ্যন্তরীণ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে দেশগুলো। যেমন বাহ্যিক সংকটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।

ঋণের বোঝা বাড়ায় উদীয়মান বাজারে নতুন বিনিয়োগ ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে আইআইএফের এম্রে টিফটিকের পরামর্শ হলো, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে আরো বেশি বেসরকারি মূলধন সংগ্রহের উপায় খুঁজতে হবে। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে পারবে।

দেখা যাচ্ছে, কেনিয়া ও রোমানিয়ার মতো কিছু উন্নয়নশীল দেশ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধিতে সমস্যায় পড়েছে। কারণ কর বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচনের কারণে নীতি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হচ্ছে।

উদীয়মান বাজারের বিপরীতে উন্নত বাজারে ঋণের বেশির ভাগই কেন্দ্রীভূত ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সুইডেনে। গত বছর উন্নত দেশগুলোয় ঋণ বেড়ে ২১৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে এবং উন্নয়নশীল দেশের সম্মিলিত ঋণ ছিল ১০৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার।

প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর পারিবারিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার। আর্থিক খাত-বহির্ভূত0কোম্পানি ঋণ ছিল ৯১ লাখ ৩০ হাজার কোটি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার।