[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1361165231.jpg[/IMG]
বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল রফতানিকারী কোম্পানি সৌদি আরামকো ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম মুনাফা করেছে। যার প্রভাব পড়বে চলতি বছর কোম্পানির বিতরণকৃত লভ্যাংশের ওপর। খবর দ্য ন্যাশনাল।
প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছর আনুমানিক ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বাভাস দিয়েছে সৌদি আরামকো, যা কিনা গত বছর বিতরণকৃত ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম।
২০২৪ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা কমে ১০ হাজার ৬২৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২৩ সালে ১২ হাজার ১২৭ কোটি ডলার ছিল।
গত মঙ্গলবার সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ তাদাউলে দাখিল করা নথিতে আরামকো জানিয়েছে, ২০২৪ সালে কোম্পানির আয় প্রায় ১ শতাংশ কমে ৪৩ হাজার ৬৬১ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ব্রেন্ট ক্রুড হলো বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের প্রধান সূচক, যা বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার হয়। গত বছর এ সূচক নিম্নমুখী থাকার প্রভাব পড়ে আরামকোর ব্যবসায়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধি এবং চীনের দুর্বল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিবেদনে আরামকো জানিয়েছে, ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২ হাজার ১৩৬ কোটি ডলার লভ্যাংশ বিতরণ করবে, যার মধ্যে একটি ছোট পারফরম্যান্স লভ্যাংশ হিসেবে ২২ কোটি ডলার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আরামকোর বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হলো সৌদি সরকার। কোম্পানি লভ্যাংশ থেকে বড় অংকের অর্থ সংগ্রহ করে তারা, যা জাতীয় বাজেট ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের উদ্যোগে অর্থায়নে ব্যবহার হয়।
আরামকোর প্রধান নির্বাহী আমিন নাসের বলেছেন, ‘২০২৪ সালে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং ২০২৫ সালেও আরো বৃদ্ধি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নির্ভরযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি অপরিহার্য, তাই আমরা আমাদের প্রকল্পগুলোয় উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’
চলতি বছর আরামকো ৫ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার মূলধনি ব্যয় এবং অতিরিক্ত ৪০০ কোটি ডলার প্রকল্প অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে। ২০২৪ সালে মোট মূলধনি ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ৫ হাজার ৪০ কোটি ডলার ছিল অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও সম্পদ থেকে আসা মূলধনি ব্যয়।
আরামকো বলেছে, আপস্ট্রিম ও ডাউনস্ট্রিম উভয় ক্ষেত্রেই তাদের প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা যথাযথভাবে এগোচ্ছে। কোম্পানিটি আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ৯০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলার এবং ডাউনস্ট্রিম সম্প্রসারণের মাধ্যমে ৮০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত নগদ প্রবাহ অর্জন করবে।
আরামকো সৌদি আরবের পূর্ব প্রদেশে অবস্থিত বিশাল জাফুরা গ্যাস প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। এর লক্ষ্য হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে তরল জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা। এছাড়া কোম্পানিটি বৈশ্বিক তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, যার মধ্যে এলএনজি প্রকল্পে বিনিয়োগ ও সরবরাহ চুক্তি অন্তর্ভুক্ত।

আরামকো বলেছে, তাদের অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা বাজারের নতুন চাহিদার সঙ্গে দ্রুত সাড়া দেয়ার সুযোগ তৈরি করবে। গত বছরের গড় মূল্য অনুসারে, দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেল অতিরিক্ত উৎপাদন করতে পারলে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার অতিরিক্ত নগদ আয় সম্ভব।

২০২৩ সালে কোম্পানির অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি মূল্য ছিল ৮৩ ডলার ৬০ সেন্ট, যা ২০২৪ সালে ৮০ ডলার ২০ সেন্টে নেমে আসে।

চলতি বছরের শুরু থেকে জ্বালানি তেলের বাজার বেশ অস্থির রয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া ও ইরানের জ্বালানি তেল প্রবাহকে সীমিত করেছে। পাশাপাশি জ্বালানি আমদানির ওপর শুল্কসংক্রান্ত আলাপ এবং সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।