[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/836060042.jpg[/IMG]
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত বিস্তৃত হারের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বাস্তবায়ন শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর হঠাৎ আসে স্থগিতের ঘোষণা। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের চমকে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুধবার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী দেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হলো। অর্থাৎ পূর্ণমাত্রার বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে আপাতত সরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যার নগদ প্রভাব দেখা যায় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে সূচক দ্রুত চড়তে থাকে। খবর এফটি ও দ্য ন্যাশনাল।
মার্কিন শেয়ারবাজারে বুধবার তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এদিন লেনদেন শেষ হওয়ার আগে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক বাড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রযুক্তিভিত্তিক নাসডাক কম্পোজিট ইনডেক্স ১২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি নিয়ে লেনদেন শেষ করে। ডাও জোনস সূচক বাড়ে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ডাটা বিশ্লেষক সংস্থা ফ্যাক্টসেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এ ঊর্ধ্বগতি এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর বাজারমূল্যে প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার যোগ করেছে। ২০০৮ সালের পর এটি ছিল সূচকটির সেরা দিন এবং ২০০১ সালের পর নাসডাকের জন্য সবচেয়ে ভালো দিন।
জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ৩ শতাংশের বেশি পতন দেখেছিল বুধবার। এরপর ইতিবাচক বার্তা নিয়ে শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল। এদিন লেনদেনের শুরুতে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ে নিক্কেই ২২৫ সূচক। দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি ইনডেক্স ১ দশমিক ৫ শতাংশ পতন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫ শতাংশ বাড়ে। অন্যদিকে তীব্র পতনের কারণে বিয়ার টেরিটরিতে (দরপতন জনিত বিক্রয়চাপ বৃদ্ধি) চলে যাওয়া তাইওয়ানের শেয়ার সূচক ৯ শতাংশেরও বেশি বাড়ে। অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার সূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি ও হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কার মধ্যেও চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়ে। কারণ ট্যারিফের প্রভাব কমাতে দেশটিতে সহযোগী হতে পারে বেইজিংয়ের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ।

বাণিজ্যযুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও পুরোপুরি এড়ানো গেছে এমনও নয়। কারণ চীনকে নতুন সিদ্ধান্তের বাইরে রেখেছেন ট্রাম্প। দেশটির ওপর শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সংঘাত আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া বেশির ভাগ দেশের ওপর ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘৭৫টির বেশি দেশ আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফোন করেছে এবং আমার জোরালো পরামর্শে এ দেশগুলো কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেয়নি। এজন্য আমি ৯০ দিনের বিরতি এবং এ সময়ের জন্য ১০ শতাংশ হারে উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অনুমোদন করেছি, যা সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হবে।’

ট্রাম্প অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে প্রতিশোধ নিয়ে ‘অসম্মান’ করেছে চীন। তাই তিনি চীনের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। পাল্টা জবাবে গতকাল চীন অতিরিক্ত ৮৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর চীনে শুল্ক ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। বাণিজ্যযুদ্ধে চীন যে পিছু হটবে না এতে সে ইঙ্গিতও মিলল।

ক্ষমতায় আসার পর থেকে দফায় দফায় শুল্ক চাপানোয় তৎপর দেখা গেছে ট্রাম্পকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। বৈশ্বিক সূচকগুলো ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য হারায়, ঝুঁকির মুখে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড বিক্রির হার বেড়ে যায় এবং জ্বালানি তেলের দাম কভিড সময়ের স্তরে নেমে আসে। শুল্ক থেকে ট্রাম্পের পিছু হটা প্রসঙ্গে নাটঅ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজের অ্যান্ডি ব্রেনার বলেন, ‘এটি হলো বাজারের কাছে ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ। তিনি চীনের ওপর শুল্ক বজায় রেখে নিজের মুখরক্ষা করেছেন।’

ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্তের পর বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ডের বিক্রি কমেছে। বুধবার ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার দশমিক ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও দিন শেষে দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বৃদ্ধিতে নেমে আসে। এতে সুদহার দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের কারণে মানুষ একটু অতিরিক্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তিনি উচ্চ শুল্ক থেকে সরে এলে তা ‘আর্থিক বাজারের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দিন’ হয়ে ওঠে।

ওয়াল স্ট্রিটের বড় ব্যাংকগুলো আগেই সতর্ক করেছিল, মার্কিন অর্থনীতিকে মন্দায় ফেলবে এবং মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বাড়াবে শুল্ক। ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগে গোল্ডম্যান স্যাকস পূর্বাভাস দিয়েছিল, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে মন্দার মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যেই তারা সে পূর্বাভাস প্রত্যাহার করে নেয়।

অবশ্য বিনিয়োগকারী ও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এখনো বহাল থাকা শুল্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমাবে ও পণ্যের দাম বাড়াবে। সিটিগ্রুপ এক বিবৃতিতে বলেছে, চীন ছাড়া অন্য দেশের ওপর রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ স্থগিত থাকার মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা ও মূল্যস্ফীতির হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে এবং চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি বাড়তে পারে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।