ঢাকা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে কিছু মৌলিক নিয়মকানুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:

১. বিনিয়োগকারীর যোগ্যতা: একজন বাংলাদেশী নাগরিক শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।

২. বিও অ্যাকাউন্ট (Beneficiary Owner's Account): শেয়ার কেনাবেচার জন্য অবশ্যই একটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এটি কোনো ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে খোলা যায়।

৩. ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (DP): ব্রোকারেজ হাউসগুলো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (CDBL) এর ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট হিসেবে কাজ করে। আপনার কেনা শেয়ারগুলো ইলেকট্রনিক আকারে আপনার বিও অ্যাকাউন্টে জমা থাকে।

৪. মার্কেট বিশ্লেষণ: মৌলিক বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন, সেটির আর্থিক অবস্থা, ব্যবস্থাপনা, শিল্পের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণা (লভ্যাংশ), ইপিএস (Earnings Per Share) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ (Technical Analysis): চার্ট প্যাটার্ন, ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে শেয়ারের মূল্যের প্রবণতা এবং সম্ভাব্য গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করুন।

৫. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি থাকে। আপনার বিনিয়োগকৃত মূলধন হারানোর ঝুঁকি মেনে নিয়েই বিনিয়োগ করুন। পুরো অর্থ একসাথে বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

৬. গুজব থেকে সাবধান: শেয়ার বাজারে প্রায়শই বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণ হয়। বিএসইসি গুজব ছড়ানোকে আইনত নিষিদ্ধ করেছে। বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যাচাইবিহীন তথ্যের উপর নির্ভর করবেন না।

৭. পোর্টফোলিও বৈচিত্র্যকরণ (Diversification): একটি মাত্র কোম্পানিতে বা একটি মাত্র খাতে সমস্ত অর্থ বিনিয়োগ না করে বিভিন্ন খাতে ও বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিন, যাতে একটি খাতে মন্দা দেখা দিলেও আপনার পুরো বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

৮. নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ: বাজারের খবর, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের নীতিগুলোর উপর নজর রাখুন, কারণ এগুলো শেয়ার বাজারের উপর প্রভাব ফেলে।

৯. বিনিয়োগ শিক্ষা: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ শিক্ষা গ্রহণ করুন। বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্স, বই এবং সেমিনারের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করুন। বিএসইসিও বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারে কাজ করছে।

ঢাকা শেয়ার বাজার দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্যক্তিরা লাভবান হতে পারেন, তেমনি অন্যদিকে দেশের শিল্পায়নেও এটি ভূমিকা রাখে। তবে, সঠিক জ্ঞান, বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ছাড়া বিনিয়োগ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।