এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জেনারেটিভ এআই বা জেনএআইভিত্তিক সফটওয়্যার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) গভর্ন্যান্স বা নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইডিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কোড লেখার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রিজনিং লজিক অর্থাৎ সিদ্ধান্ত তৈরির পেছনের যুক্তি তৈরিতে।
‘পায়োনিয়ারিং ইনোভেশন উইথ জেনএআই-ইনফিউজড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফটওয়্যার তৈরির প্রক্রিয়াগুলো এখন আর শুধু সাধারণ কোড চালানোর টুল নয়। বরং ধীরে ধীরে তা বুদ্ধিমত্তাসম্পন ন সহযোগীতে রূপ নিচ্ছে। এ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে শুধু নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, সরাসরি সোর্স কোড স্তরে এআই গভর্ন্যান্স সংযুক্ত করছে।

আইডিসির গত ফেব্রুয়ারিতে করা এফইআরএস জরিপ অনুযায়ী, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখন এআই গভর্ন্যান্সকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ ধারা ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য সফটওয়্যার উন্নয়নের রূপরেখা নির্ধারণ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোর্স কোড স্তরে গভর্নেন্স যোগ করলে পুরো মডেল কীভাবে তৈরি, প্রশিক্ষিত ও ব্যবহৃত হচ্ছে তা অনুসরণ করা যায়। এতে আইনি জটিলতা কমে সরকারি দরপত্র দ্রুত অনুমোদিত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে।

২০২৪ সালের আইডিসি সফটওয়্যার জরিপে উঠে এসেছে, ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ট্রেসেবিলিটি, কমপ্লায়েন্স ও গভর্ন্যান্সকে ভবিষ্যতের এআই অটোমেশন কৌশলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।
সিঙ্গাপুর, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো এরই মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে এআই গভর্ন্যান্স কাঠামো তৈরি করার কাজ শুরু করেছে। সিঙ্গাপুরে নিয়ন্ত্রিত স্যান্ডবক্স মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে, যাতে এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি না থাকে। ভারতের ক্ষেত্রে সভরেন এআই ব্যবহারে জোর দেয়া হচ্ছে, যাতে দেশীয় চাহিদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ প্রযুক্তি তৈরি করা যায়। এ পদক্ষেপগুলো উন্নত ও নিরাপদ জেনএআই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই কমপ্লায়েন্স (আইন, নীতি ও নিয়ম অনুসরণ) নিশ্চিত করছে, তারা দ্রুত বাজারে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে পারছে। কেবল দ্রুত কোড লেখা নয়; বরং সেটি যেন নিরাপদ, ন্যায্য ও ব্যাখ্যাযোগ্য হয় তা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আইডিসি জানিয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখন তাদের জেনএআই কৌশলে ইথিকাল এআই ও ডাটা নিরাপত্তাকে প্রধান গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের নিয়মকানুন আরো কঠোর হওয়ায়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, বরং গভর্ন্যান্সভিত্ত ক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে।

আইডিসির এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সিনিয়র রিসার্চ ম্যানেজার ধীরাজ বাদগুজার বলেন, ‘জেনএআই সফটওয়্যার উন্নয়নের ধারা একদম বদলে দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো জেনএআই গ্রহণ করব কিনা, সেটা নয়। বরং আমরা এটি কতটা দায়িত্বশীল ও নিরাপদভাবে গ্রহণ করছি, সেটাই আসল বিষয়।’