Bitcoin সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অনলাইনে সবচেয়ে আলোচিত একপ্রকার "ক্রিপ্টোকারেন্সি" ।
হ্যাঁ, আজকে আমরা জানবো " ক্রিপ্টোকারেন্সি" কি? কিভাবেই বা এর উদ্ভব ঘটল? এবং কেনই বা এটাকে নিয়ে সারা বিশ্বে এত হইচই।
🔰 ক্রিপ্টোকারেন্সি -
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো একটা ডিজিটাল বা র্ভাচুয়াল মুদ্রা যা ব্যবহার করে অনলাইন কোন পণ্য বা পরিষেবা ক্রয় করা যায় এবং যা ক্রিপ্টো গ্রাফি দ্বারা সুরক্ষিত থাকে৷
ক্রিপ্টোকারেন্সি ুলি ব্লকচেইন নামে একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। ব্লকচেইন হ'ল একটি বিকেন্দ্রীভূত (কোন কেন্দ্রের আওতাধীন নয়) প্রযুক্তি যা বহু কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে লেনদেন পরিচালনা করে এবং রেকর্ড করে।
🔰 ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ভবঃ
১৯৮৩ সালে আমেরিকান ক্রিপ্টোগ্রাফার ডেভিড চৌম ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল উপায়ে টাকা আদান প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। যার নাম দেন ই-ক্যাশ। ১৯৯৫ সালে, তিনি ডিজিক্যাশের মাধ্যমে এটি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ইলেকট্রনিক পেমেন্টের প্রাথমিক ফর্ম বাস্তবায়নের দিকে এগুতে থাকেন। পরবর্তীতে সফটওয়ারে নির্দিষ্ট এনক্রিপটেড কীগুলি ইনপুটের পর প্রাপক প্রেরণকারীর অর্থ পান। তবে এই অর্থ কোন রাষ্ট্রে পরিচালিত মুদ্রা (টাকা, ডলার, পাউন্ড, দিনার) এর মত নয়। সম্পূর্ণ অস্থিত্বহীন পয়েন্ট। তবে সাতশি নাকামোতো (কোন ব্যক্তি বা গ্রুপ) সফলভাবে কেন্দ্রীয় সত্তা বিহীন ডিজিটাল ক্যাশ পেমেন্ট চালু করেন। যা বিটকয়েন নামে পরিচিত।
🔰 ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকারভেদঃ
সারা পৃথিবীতে প্রায় হাজারেরও উপরে ক্রিপ্টো কারেন্সি রয়েছে । এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, রিপল মোনেরো, ড্যাশ, বাইটকয়েন, ডোজকয়েন ইত্যাদি তবে এগুলোর মধ্যে বিটকয়েন সবার সর্বপ্রথমে এসেছে ও সবচেয়ে পরিচিত ক্রিপ্টো কারেন্সি । মূলত এর সফলতার কারণেই অন্যান্য কারেন্সি গুলোর জন্ম হয়েছে।
🔥 কেনো ক্রিপ্টো কারেন্সি পৃথিবী ব্যাপী এত জনপ্রিয় ও আলোচিত
ক্রিপ্টো কারেন্সি হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল মুদ্রা যা ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুইজন ব্যবহারকারীর মধ্যে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করেও এটা সরাসরি আদান-প্রদান (পিয়ার-টু-পিয়ার) করা হয়। এই লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে, কিন্তু এই মুদ্রার লেনদেন তদারকির জন্য কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো কর্তৃপক্ষ থাকে না। এই মাইনারের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয়।
ধরুন আপনি আপনার বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসের বিল বিকাশ/রকেট/নগদ কিংবা ব্যাংক এর মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকেন। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও আপনার মাঝে তৃতীয় পক্ষ ব্যাংক/বিকাশ/নগদ থাকায় আপনাকে বিল পরিশোধ সময় অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয়। ক্রিপ্টো কারেন্সি তৃতীয় পক্ষ না থাকায় অনেক কম সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি বা কেনার পর তা গ্রাহকের হিসাবে জমা থাকে। পরবর্তীতে তিনি সেগুলো ব্যবহার করে পণ্য কিনতে পারেন বা বিক্রি করে দিতে পারেন। বিক্রি করলে ক্রিপ্টোকারেন্সি পরিবর্তে প্রচলিত অর্থে তা গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন কম্পিউটার ব্যবহার করে লেনদেন করা হলেও সেসব তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে হালনাগাদ করা হয়ে থাকে।
দ্রুত লেনদেন এবং বিকেন্দ্রীকতার কারণে ক্রিপ্টো কারেন্সি জনপ্রিয়। সমস্ত ক্রিপ্টো কারেন্সি বিকেন্দ্রীভূত এর অর্থ এটি কোন দেশ বা সরকারের অধীনে থাকে না এবং প্রচলিত কোন মুদ্রা স্ফীতি এর ডিজিটাল মুদ্রা উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।
আধুনিক ক্রিপ্টোকারেন্সি সিস্টেমে কোনও ব্যবহারকারীর " ওয়ালেট " বা অ্যাকাউন্টের ঠিকানাতে একটি পাবলিক কী (Key) থাকে, ব্যক্তিগত এই 'কী' টি কেবল মালিকের কাছে পরিচিত এবং লেনদেনগুলিতে স্বাক্ষর করতে ব্যবহৃত হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি তে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় সর্বোচ্চ সুরক্ষিত থাকে এবং বিশ্বের যেকোন জায়গা থেকে এর লেনদেনের তথ্য দেখা সম্ভব।
মার্কেট রিসার্চ ওয়েবসাইট CoinMarketCap এর মতে 10,000 টিরও বেশি আলাদা ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রকাশ্যে লেনদেন করা হয় এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ুলো Initial Coin offerings বা ICO এর মাধ্যমে অর্থ জোগাড় করা অব্যাহত রাখে। CoinMarketCap অনুসারে 27 মে, 2021-এ পর্যন্ত সমস্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি ুলির মোট মূল্য $ 1.7 ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল - যা এপ্রিল মাসে ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার অধিক ছিলো। সর্বাধিক জনপ্রিয় ডিজিটাল মুদ্রার্ বিটকয়েনের মোট মূল্য প্রায় $ 735 বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে - এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ 1.2 ট্রিলিয়ন ডলার ছিলো।
🔰 ক্রিপ্টোকারেন্সি অসুবিধাঃ
ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের আধা-বেনামি প্রকৃতি এগুলি অর্থ পাচার এবং কর ফাঁকি দেওয়ার মতো অনেকগুলি অবৈধ ক্রিয়াকলাপের জন্য উপযুক্ত করে তোলে ।ক্রিপ্টোকারেন্স সংরক্ষণের জন্য কোন সংরক্ষণাগার নেই। তাই ব্যাকআপ না থাকলে কম্পিউটার ক্রাশের মাধ্যমে মুছে যেতে পারে তথ্য উপাত্ত।
🔰 বাংলাদেশ ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধতাঃ
বিশ্বের অনেক দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে বৈধতা থাকলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি কে বৈধ ঘোষণা করা হয় নি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক বিটকয়েনে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্কতা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ভার্চুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না বিধায় এর বিপরীতে আর্থিক দাবির কোন স্বীকৃতিও নেই।